১৯৫২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ২৭ শে জানুয়ারি পল্টন ময়দানের এক জনসভায় দীর্ঘ ভাষণ দেন। তিনি মূলত জিন্নাহ র কথারই পুনরুক্তি করে বলেন,”পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু।” ভাষা আন্দোলন জোরালো হওয়ার পেছনে ২৭ তারিখ এর এই ভাষণকে প্রধান নিয়ামক হিসেবে ধরা যায়। সরাসরি রেডিওতে সম্প্রসারিত এই ভাষণে তিনি আরো বলেন,”কোন জাতি দু’ টি রাষ্ট্রভাষা নিয়ে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারে না।”
এই বক্তৃতার প্রতিবাদে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিশোধ ২৯শে জানুয়ারি প্রতিবাদ সভা এবং ৩০শে জানুয়ারি ঢাকায় ধর্মঘট পালন করে। সেদিন ছাত্র ও নেতৃবৃন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সমবেত হয়ে ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট ও প্রতিবাদ সভা এবং ২১ শে ফেব্রুয়ারি সারা প্রদেশব্যাপী হরতাল পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।
২১শে
ফেব্রুয়ারী সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এসে জড়ো হয়। তারা ১৪৪ ধারা জারির বিপক্ষে স্লোগান দিতে
থাকে। পুলিশ সভাস্থলের চারদিক ঘিরে রাখে। বেলা সোয়া এগারটার দিকে ছাত্ররা গেটে
জড়ো হয়ে প্রতিবন্ধকতা ভেঙে রাস্তায় নামতে চাইলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস বর্ষণ করে। উপাচার্য তখন পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ বন্ধ
করতে এবং ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দেয়। কিন্তু ছাত্ররা
ক্যাম্পাস ত্যাগ করার সময় কয়েকজনকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অভিযোগে পুলিস গ্রেফতার শুরু
করলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় ছাত্ররা আরও ক্ষুব্ধ
হয়ে তাদের বিক্ষোভ পুনরায় শুরু করে।
বেলা
২টার দিকে আইন পরিষদের সদস্যরা আইনসভায় যোগ দিতে এলে ছাত্ররা তাদের বাধা দেয় এবং
সভায় তাদের দাবি উত্থাপনের দাবি জানায়। পরবর্তিতে ছাত্ররা আইন সভায় গিয়ে তাদের দাবি উত্থাপন সেই উদ্দেশ্যে রওনা করলে বেলা ৩টার দিকে পুলিশ
ছাত্রাবাসে গুলিবর্ষণ শুরু করে। পুলিশের গুলি বর্ষণে আব্দুল জব্বার এবং রফিক উদ্দিন
আহমেদ ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এছাড়াও আব্দুস সালাম, আবুল বরকতসহ আরও অনেকে সে সময় নিহত হন।
ছাত্র হত্যার সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রদের শুরু করা আন্দোলন জনমানুষের আন্দোলনে রূপ নেয়। রেডিও শিল্পীরা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে শিল্পী ধর্মঘট আহবান করেন।
ছাত্র হত্যার সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রদের শুরু করা আন্দোলন জনমানুষের আন্দোলনে রূপ নেয়। রেডিও শিল্পীরা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে শিল্পী ধর্মঘট আহবান করেন।
এই
সময় গণপরিষদে অধিবেশন শুরুর প্রস্তুতি চলছিল। পুলিশের গুলির খবর জানতে পেরে
মাওলানা তর্কবাগিশসহ বিরোধি দলীয় বেশ কয়েকজন অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করে বিক্ষুদ্ধ
ছাত্রদের পাশে এসে দাঁড়ান। গণপরিষদে বেশ কজন সদস্য মুখ্যমন্ত্রী নুরুল
আমিনকে হাসপাতালে আহত ছাত্রদের দেখতে যাওয়ার অনুরোধ করেন এবং শোক প্রদর্শনের
লক্ষ্যে অধিবেশন স্থগিত করার কথা বলেন। যদিও নুরুল আমিন অন্যান্য নেতাদের
অনুরোধ রাখেননি এবং অধিবেশনে বাংলা ভাষার বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন।
ঢাকা
মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা ২৩ ফেব্রুয়ারির রাত শেষে শহীদ মিনার তৈরির কাজ শুরু করে। ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে শহীদ
শফিউরের পিতা অনানুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে
দশটার দিকে শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন।
উদ্বোধনের দিন পুলিশ প্রথম শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলে। এরপর ঢাকা কলেজেও একটি শহীদ
মিনার তৈরি করা হয়, এটিও সরকারের নির্দেশে ভেঙ্গে ফেলা
হয়।
২১
ফেব্রুয়ারি গুলিবর্ষণের ঘটনার পর, একুশ নিয়ে প্রথম গান লেখেন
আবদুল গাফফার চৌধুরী। গানটি হল, "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো
একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।" প্রথমে আব্দুল লতিফ সুর দেন।
পরে করাচী থেকে ঢাকা ফিরে ১৯৫৪ সালে আলতাফ মাহমুদ আবার নতুন সুর দেন। বেলা ১১ টার দিকে ৩০ হাজার
লোকের একটি মিছিল কার্জন হলের দিকে অগ্রসর হতে থাকলে পুলিশ তাদের উপর গুলিবর্ষণ
করে। এই ঘটনায় সরকারি হিসেবে ৪ জনের মৃত্যু হয়।
বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয় ২৯ ফেব্রুয়ারী ১৯৫৬ সালে। সংবিধানের ২১৪(১) অধ্যায়ে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে লেখা হয়:
"214.(1) The state language of Pakistan shall be Urdu and Bengali"
অর্থাৎ উর্দু এবং বাংলা হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।
বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয় ২৯ ফেব্রুয়ারী ১৯৫৬ সালে। সংবিধানের ২১৪(১) অধ্যায়ে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে লেখা হয়:
"214.(1) The state language of Pakistan shall be Urdu and Bengali"
অর্থাৎ উর্দু এবং বাংলা হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।
0 comments:
Post a Comment